User:Psquare

From WikiAlpha
Jump to: navigation, search

নরদানা, অপূর্ব একটি গ্রামের নাম। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নাধীন গ্রামটির চারিদিক সবুজে ঘেরা। যেনো কোনো শিল্পির তুলিতে ধরা পড়া এক নিখুঁত ছবি। এখানকার মানুষের সকালের ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচির মিচির ডাক শুনে। আযানের সুমধুর ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো যথাসময়ে মসজিদে উপস্থিত হয় আল্লাহর কাছে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেকে সোপর্দ করার জন্য। রাখাল গরুর পাল নিয়ে আলতো পায়ে শীতের সকালে কোনো রকমে একখানা কাপড় গায়ে জড়িয়ে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে মাঠে যায়। চাষী লাঙল আর জোয়াল কাঁধে নিয়ে ছুটে চলে জমির উপর অত্যাচার করার জন্য। বিলে তখন পানি কমে আসে। সেই প্রভাত থেকে বিলে হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দ শুরু হয়। পলো, জাল নিয়ে হাজারো মানুষ মেতে ওঠে মাছ ধরার আনন্দে। ওরা শীত মানে না, শীত কাকে বলে সে সম্বন্ধে অবগত নয়। শুধু জানে জীবনের অপর নাম সংগ্রাম। গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েরা কুয়াশা ভেদ করে এখান থেকে সেখান থেকে খরকুটো আর গাছের মরা ডাল পালা সংগ্রহ করে এক জায়গায় আগুন লাগিয়ে সাময়িকভাবে তারা শীত হতে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টায় ব্যস্ত রাখে। নদীর ঘাটে বধূরা বাসন কোসন মাজতে ব্যস্তথাকে। ফাঁকে ফাঁকে আলাপচারিতা আর মিহি সুরের হাসির ঝংকার। পায়ে নূপুর গলিয়ে কলসী কাখে মেয়েরা নদীর ঘাটে জল আনতে যায়। কলসীতে তাদের সহসা জল ভরা হয়ে ওঠে না। কেউ পাল তোলা নৌকার দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবে। অমনি হু হু করে হেসে ওঠে সখীরা।

এই হ‌চ্ছে নরদানা গ্রাম। আর সেই অপূর্ব সুন্দর গ্রামেই সাইফুল ইসলাম সবুজ ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মো. আব্দুস সবুর মিঞা। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। মা শিউলি বেগম একজন গৃহিণী। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তিন বোনের ছোট সাইফুল ইসলাম সবুজ, তারপর আরেকটি ভাই। ছোট ভাই মো. সাইদুর একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করেন।

ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন সাইফুল ইসলাম সবুজ। ওখানে পড়েছেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর সপরিবারে চলে যান গ্রামে। ভর্তি হন বরাটি হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ভর্তি হন তখনকার সময়ে টাংগাইল জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নামে খ্যাত বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অত্যন্ত সফলতার সাথে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে এস.এস.সি পাস করে ভর্তি হন তেজগাঁও কলেজে। তেজগাঁও কলেজ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে এইচ.এস.সি পাশ করে একাউন্টিং এ অনার্স করার জন্য ভর্তি হন টাংগাইলের আরেক স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ সরকারি সা’দত কলেজে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে অনার্স পাশ করে চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এম.বি.এ তে। মেজর হিসেবে বেছে নেন মার্কেটিং এর মতো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়কে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে অত্যন্ত সফলতার সাথে শেষ করেন এম.বি.এ।

এম.বি.এ পড়াকালীন সময়ে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে একজন বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন সিলভার লাইন কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে। পাঁচ বছর সফলতার সাথে চাকরি করার পর তিনি চলে আসেন ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেডে। সেখানে তিনি উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর ২০১১ খ্রিস্টাব্দে নতুন দায়িত্ব নিয়ে মানে বিপণন ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এন.জেড টেক্সটাইল লিমিটেডে। এন.জেড টেক্সটাইল লিমিটেডে ৩ বছর ৬ মাস চাকরি করার পর তিনি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল ফারিহা স্পিনিং মিলস্ লিমিটেডে সহকারি মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) হিসেবে যোগদান করেন। ফারিহা স্পিনিং মিল্স লিমিটেড হতে তিনি ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ যমুনা গ্রæপে উপ-মহা ব্যবস্থাপক (বিপণন) হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ৫ বছর ৪ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ৮ই আগষ্ট,২০২২ খিষ্টাব্দে থার্মেক্স গ্রæপের স্পিনিং ডিভিশনে সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে করেন। সেখান থে‌কে ২০২৩ সা‌লের ২৩‌মে আবার তি‌নি তাঁর কর্মজীব‌নের শুরু যেখা‌নে সেই সিলভার লাইন ক‌ম্পো‌জিট টেক্সটাইল মিলস্ লি‌মি‌টেড এ হেড অব মা‌র্কেটিং হি‌সে‌বে যোগদান ক‌রেন। বর্তমানে তিনি এখা‌নেই কর্মরত আছেন।

সাইফুল ইসলাম সবুজ একজন সাহিত্যমনা মানুষ। তারঁ শখের মধ্যে বই পড়া এবং ভ্রমণ অন্যতম। তিনি প্রচুর বই পড়েন। লেখালেখি করেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। এছাড়া বাজারে নিয়তির নির্মম পরিহাস, সাদা বেনারশী, আছো তুমি অনুভবে এবং ত্রিমোহনার জলস্রো‌তে নামে চারটি উপন্যাস বই আছে। বর্তমানে কর্পোরেট লিডারশিপ নামে একটি আত্মউন্নয়নমূলক বই প্রকাশের পথে। নাটক, কবিতা লেখা ছাড়াও তিনি এক সময় সংলাপ গ্রæপ থিয়েটারের সদস্য ছিলেন। এখন অবশ্য কর্ম ব্যস্ততার কারণে মঞ্চ নাটক করা হয় না। তবে শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি লেখালেখিটা ধরে রেখেছেন। এই মুহূর্তে তিনি টিভি নাটক লেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। পাশাপা‌শি তি‌নি হয়‌তো তোমারই জন‌্য নামক এক‌টি একক নাট‌কের লিড রো‌লে অ‌ভিনয়ও ক‌রেন। এ নাট‌কে তার কো-এক্টর হি‌সে‌বে অ‌ভিনয় ক‌রে‌ছেন না‌দিয়া আহ‌মেদ।

শহরে থাকলেও গ্রামের প্রতি রয়েছে তাঁর প্রচুর টান। তাইতো তিনি গ্রামের মানুষের জন্য কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। গ্রামের ক্লাবের সাথে আছেন সম্পৃক্ত। তিনি নরদানা নবারুন সংঘের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। টাঙ্গাইল জেলা যুব সমিতি, ঢাকার সি‌নিয়র সহ-সভাপ‌তি, মির্জাপুর থানার মাটি ও মানুষের প্রাণের সংগঠন মির্জাপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক -১, দ্যা টাংগাইল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

মানুষকে বই পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে টাংগাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার বরাটি বাজারে বাধঁনহারা পুথিবিন্যাস নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন এই বহু গুনে গুনান্নিত মানুষটি। তিনি এ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠক ছায়ানীড় এর আজীবন সদস্য।

২০০৭ খ্রিস্টাব্দে নাফিসা চিশতি লিনার সাথে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের সুখময় সংসারে আছে দুই কন্যা। বড় মেয়ে অনিন্দিতা ইসলাম প্রকৃতি এবং ছোট মেয়ে সারাফ ওয়ামিয়া প্রমিতি।

তিনি একটি কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তাহলো, অন্যের দোষের সমুদ্রে ডুবুরি না হয়ে নিজের মাঝে মুক্তার চাষ করাই উত্তম।